বানান ও ভাষারীতি
১। যুক্তবর্ণের তালিকা ২। বানানের নিয়ম ৩। যতি-চিহ্নের ব্যবহার ৪। জেনে রাখা ভালো
বাংলা যুক্তবর্ণের তালিকা
যুক্তবর্ণ বলতে একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণের সমষ্টিকে বোঝানো হয়েছে। যুক্তবর্ণগুলি বাংলা লিখন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। উচ্চারিত ধ্বনির সাথে এগুলির উপাদান ব্যঞ্জনবর্ণের নির্দেশিত ধ্বনির সবসময় সরাসরি সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। যেমন - পক্ব -এর উচ্চারণ পক্‌কো; বানানে ব-ফলা থাকলেও উচ্চারণে ব ধ্বনিটি অনুপস্থিত। রুক্ষ-এর উচ্চারণ রুক্‌খো; বানানের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষ যুক্তবর্ণটি ক ও ষ-এর যুক্তরূপ হলেও উচ্চারণ হয় ক্‌খ। নিচের যুক্তবর্ণের তালিকাটি বাংলা সঠিকভাবে লিখতে সহায়ক হতে পারে। এখানে বাংলায় ব্যবহৃত ২৮৫টি যুক্তবর্ণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোন যুক্তবর্ণ সম্ভবত বাংলায় প্রচলিত নয়।
  1. ক্ক = ক + ক;  আক্কেল
  2. ক্ট = ক+ট;  ডক্টর 
  3. ক্ট্র = ক + ট + র; অক্ট্রয়
  4. ক্ত = ক + ত;  রক্ত
  5. ক্ত্র = ক+ত+র;  বক্ত্র
  6. ক্ব = ক + ব;  পক্ব, ক্বণ
  7. ক্ম = ক + ম;  রুক্মিণী
  8. ক্য = ক + য;  বাক্য
  9. ক্র = ক + র;  চক্র
  10. ক্ল = ক + ল;  ক্লান্তি
  11. ক্ষ = ক + ষ;  পক্ষ
  12. ক্ষ্ণ = ক+ষ+ণ;  তীক্ষ্ণ
  13. ক্ষ্ব = ক+ষ+ব;  ইক্ষ্বাকু
  14. ক্ষ্ম = ক+ষ+ম;  লক্ষ্মী
  15. ক্ষ্ম্য=ক+ষ+ম+য;সৌক্ষ্ম্য
  16. ক্ষ্য = ক + ষ + য; লক্ষ্য
  17. ক্স = ক + স;  বাক্স
  18. খ্য = খ + য;  সখ্য
  19. খ্র = খ+ র; খ্রিস্টান
  20. গ্‌ণ = গ + ণ;  রুগ্‌ণ
  21. গ্ধ = গ + ধ; যেমন- মুগ্ধ
  22. গ্ধ্য = গ+ধ+য;  বৈদগ্ধ্য
  23. গ্ধ্র = গ + ধ + র; দোগ্ধ্রী
  24. গ্ন = গ + ন; যেমন- ভগ্ন
  25. গ্ন্য = গ+ন+য; অগ্ন্যাশয়
  26. গ্ব = গ + ব;  দিগ্বিজয়ী
  27. গ্ম = গ + ম; যেমন- যুগ্ম
  28. গ্য = গ + য;  ভাগ্য
  29. গ্র = গ + র; যেমন- গ্রাম
  30. গ্র্য = গ+র+য; ঐকাগ্র্য
  31. গ্ল = গ + ল;  গ্লানি
  32. ঘ্ন = ঘ + ন;  কৃতঘ্ন
  33. ঘ্য = ঘ + য;  অশ্লাঘ্য
  34. ঘ্র = ঘ + র; যেমন- ঘ্রাণ
  35. ঙ্ক = ঙ + ক; অঙ্ক
  36. ঙ্‌ক্ত = ঙ+ক+ত;পঙ্‌ক্তি
  37. ঙ্ক্য = ঙ + ক + য;  অঙ্ক্য
  38. ঙ্ক্ষ = ঙ+ক+ষ; আকাঙ্ক্ষা
  39. ঙ্খ = ঙ + খ; শঙ্খ
  40. ঙ্গ = ঙ + গ;  অঙ্গ
  41. ঙ্গ্য = ঙ+গ+য; ব্যঙ্গ্যার্থ
  42. ঙ্ঘ = ঙ + ঘ;  সঙ্ঘ
  43. ঙ্ঘ্য = ঙ+ঘ+য; দুর্লঙ্ঘ্য
  44. ঙ্ঘ্র = ঙ + ঘ + র; অঙ্ঘ্রি
  45. ঙ্ম = ঙ + ম;  বাঙ্ময়
  46. চ্চ = চ + চ;  বাচ্চা
  47. চ্ছ = চ + ছ;  ইচ্ছা
  48. চ্ছ্ব=চ+ছ+ব; জলোচ্ছ্বাস
  49. চ্ছ্র = চ+ছ+র; উচ্ছ্রায়
  50. চ্ঞ = চ + ঞ;  যাচ্ঞা
  51. চ্ব = চ + ব; যেমন- চ্বী
  52. চ্য = চ + য;  প্রাচ্য
  53. জ্জ = জ+জ;  বিপজ্জনক
  54. জ্জ্ব = জ+জ+ব;  উজ্জ্বল
  55. জ্ঝ = জ + ঝ; কুজ্ঝটিকা
  56. জ্ঞ = জ + ঞ;  জ্ঞান
  57. জ্ব = জ + ব; জ্বর
  58. জ্য = জ + য;  রাজ্য
  59. জ্র = জ + র; বজ্র
  60. ঞ্চ = ঞ + চ;  অঞ্চল
  61. ঞ্ছ = ঞ + ছ;  লাঞ্ছনা
  62. ঞ্জ = ঞ + জ;  কুঞ্জ
  63. ঞ্ঝ = ঞ + ঝ;  ঝঞ্ঝা
  64. ট্ট = ট + ট;  চট্টগ্রাম
  65. ট্ব = ট + ব; যেমন- খট্বা
  66. ট্ম = ট + ম;  কুট্মল
  67. ট্য = ট + য;  নাট্য
  68. ট্র = ট + র; ট্রেন 
  69. ড্ড = ড + ড;  আড্ডা
  70. ড্ব = ড + ব;  অন্ড্বান
  71. ড্য = ড + য;  জাড্য
  72. ড্র = ড + র;  ড্রাইভার
  73. ড়্গ = ড় + গ;  খড়্‌গ
  74. ঢ্য = ঢ + য;  ধনাঢ্য
  75. ঢ্র = ঢ + র;  মেঢ্র (ত্বক)
  76. ণ্ট = ণ + ট; ঘণ্টা
  77. ণ্ঠ = ণ + ঠ;  কণ্ঠ
  78. ণ্ঠ্য = ণ + ঠ + য; কণ্ঠ্য
  79. ণ্ড = ণ + ড;  গণ্ডগোল
  80. ণ্ড্য = ণ + ড + য; পাণ্ড্য
  81. ণ্ড্র = ণ + ড + র;  পুণ্ড্র
  82. ণ্ঢ = ণ + ঢ;  ষণ্ঢ
  83. ণ্ণ = ণ + ণ;  বিষণ্ণ
  84. ণ্ব = ণ + ব;  স্হাণ্বীশ্বর
  85. ণ্ম = ণ + ম;  চিণ্ময়
  86. ণ্য = ণ + য;  পূণ্য
  87. ৎক = ত + ক;  উৎকট
  88. ত্ত = ত + ত;  উত্তর
  89. ত্ত্ব = ত + ত + ব;  সত্ত্ব
  90. ত্ত্য = ত+ত+য;  উত্ত্যক্ত
  91. ত্থ = ত + থ;  অশ্বত্থ
  92. ত্ন = ত + ন; যেমন- যত্ন
  93. ত্ব = ত + ব;  রাজত্ব
  94. ত্ম = ত + ম;  আত্মা
  95. ত্ম্য=ত+ম+য;  দৌরাত্ম্য
  96. ত্য = ত + য;  সত্য
  1. ত্র = ত + র;  ত্রিশ, ত্রাণ
  2. ত্র্য = ত + র + য;  বৈচিত্র্য
  3. ৎল = ত + ল;  কাৎলা
  4. ৎস = ত + স;  বৎসর
  5. থ্ব = থ + ব; যেমন- পৃথ্বী
  6. থ্য = থ + য; যেমন- পথ্য
  7. থ্র = থ + র; যেমন- থ্রি 
  8. দ্গ = দ + গ;  উদ্গম
  9. দ্ঘ = দ + ঘ;  উদ্ঘাটন
  10. দ্দ = দ + দ;  উদ্দেশ্য
  11. দ্দ্ব = দ + দ + ব;  তদ্দ্বারা
  12. দ্ধ = দ + ধ; যেমন- রুদ্ধ
  13. দ্ব = দ + ব; যেমন- বিদ্বান
  14. দ্ভ = দ + ভ; যেমন- অদ্ভুত
  15. দ্ভ্র = দ + ভ + র; উদ্ভ্রান্ত
  16. দ্ম = দ + ম; যেমন- ছদ্ম
  17. দ্য = দ + য; যেমন- বাদ্য
  18. দ্র = দ + র; যেমন- রুদ্র
  19. দ্র্য = দ + র + য;  দারিদ্র্য
  20. ধ্ন = ধ + ন;  অর্থগৃধ্নু
  21. ধ্ব = ধ + ব; যেমন- ধ্বনি
  22. ধ্ম = ধ + ম;  উদরাধ্মান
  23. ধ্য = ধ + য;  আরাধ্য
  24. ধ্র = ধ + র; যেমন- ধ্রুব
  25. ন্ট = ন + ট; যেমন- প্যান্ট
  26. ন্ট্র = ন + ট + র;  কন্ট্রোল
  27. ন্ঠ = ন + ঠ; যেমন- লন্ঠন
  28. ন্ড = ন + ড; গন্ডার,
  29. ন্ড্র = ন + ড + র;  হান্ড্রেড
  30. ন্ত = ন + ত; যেমন- জীবন্ত
  31. ন্ত্ব = ন + ত + ব;  সান্ত্বনা
  32. ন্ত্য = ন + ত + য;  অন্ত্য
  33. ন্ত্র = ন + ত + র;  মন্ত্র
  34. ন্ত্র্য = ন+ত+র+য; স্বাতন্ত্র্য
  35. ন্থ = ন + থ; যেমন- গ্রন্থ
  36. ন্থ্র =ন+থ+র; অ্যান্থ্রাক্স
  37. ন্দ = ন + দ; যেমন- ছন্দ
  38. ন্দ্য = ন + দ + য; অনিন্দ্য
  39. ন্দ্ব = ন + দ + ব;  দ্বন্দ্ব
  40. ন্দ্র = ন + দ + র;  কেন্দ্র
  41. ন্ধ = ন + ধ; যেমন- অন্ধ
  42. ন্ধ্য = ন + ধ + য;  বিন্ধ্য
  43. ন্ধ্র = ন + ধ + র;  রন্ধ্র
  44. ন্ন = ন + ন; যেমন- নবান্ন
  45. ন্ব = ন + ব;  ধন্বন্তরি
  46. ন্ম = ন + ম; যেমন- চিন্ময়
  47. ন্য = ন + য; যেমন- ধন্য
  48. প্ট = প + ট;  পাটি-সাপ্টা
  49. প্ত = প + ত; যেমন- সুপ্ত
  50. প্ন = প + ন; যেমন- স্বপ্ন
  51. প্প = প + প; যেমন- ধাপ্পা
  52. প্য = প + য; যেমন- প্রাপ্য
  53. প্র = প + র; যেমন- ক্ষিপ্র
  54. প্র্য = প+র+য;  প্র্যাকটিস
  55. প্ল = প + ল; যেমন-আপ্লুত
  56. প্স = প + স; যেমন- লিপ্সা
  57. ফ্র = ফ + র; যেমন- ফ্রক
  58. ফ্ল = ফ + ল;  ফ্লেভার
  59. ব্জ = ব + জ; যেমন- ন্যুব্জ
  60. ব্দ = ব + দ; যেমন- জব্দ
  61. ব্ধ = ব + ধ; যেমন- লব্ধ
  62. ব্ব = ব + ব; ডাব্বা
  63. ব্য = ব + য;  দাতব্য
  64. ব্র = ব + র; যেমন- ব্রাহ্মণ
  65. ব্ল = ব + ল; যেমন- ব্লাউজ
  66. ভ্ব =ভ + ব; যেমন- ভ্বা
  67. ভ্য = ভ + য; যেমন- সভ্য
  68. ভ্র = ভ + র; যেমন- শুভ্র
  69. ম্ন = ম + ন; যেমন- নিম্ন
  70. ম্প = ম + প; কম্প
  71. ম্প্র = ম + প + র; সম্প্রতি
  72. ম্ফ = ম + ফ; লম্ফ
  73. ম্ব = ম + ব;  প্রতিবিম্ব
  74. ম্ব্র = ম + ব + র;  মেম্ব্রেন
  75. ম্ভ = ম + ভ; যেমন- দম্ভ
  76. ম্ভ্র = ম + ভ + র;  সম্ভ্রম
  77. ম্ম = ম + ম; সম্মান
  78. ম্য = ম + য; যেমন- গ্রাম্য
  79. ম্র = ম + র; যেমন- নম্র
  80. ম্ল = ম + ল; যেমন- অম্ল
  81. য্য = য + য;  ন্যায্য
  82. র্ক = র + ক; যেমন: তর্ক
  83. র্ক্য = র + ক + য; অতর্ক্য
  84. র্গ্য = র + গ + য;  বর্গ্য
  85. র্ঘ্য = র + ঘ + য;  দৈর্ঘ্য
  86. র্চ্য = র + চ + য;  অর্চ্য 
  87. র্জ্য = র + জ + য;  বর্জ্য
  88. র্ণ্য = র + ণ + য;  বৈবর্ণ্য
  89. র্ত্য = র + ত + য;  মর্ত্য
  90. র্থ্য = র + থ + য;  সামর্থ্য
  91. র্ব্য = র+ব+য;  নৈর্ব্যক্তিক
  92. র্ম্য = র + ম + য;  নৈষ্কর্ম্য
  93. র্শ্য = র + শ + য; অস্পর্শ্য
  94. র্ষ্য = র + ষ + য; ঔৎকর্ষ্য
  95. র্হ্য = র + হ + য;  গর্হ্য
  96. র্খ = র + খ; যেমন- মূর্খ
  1. র্গ = র + গ; যেমন- দুর্গ
  2. র্গ্র = র + গ + র;  দুর্গ্রহ
  3. র্ঘ = র + ঘ; যেমন- দীর্ঘ
  4. র্চ = র + চ; যেমন- অর্চনা
  5. র্ছ = র + ছ; যেমন- মূর্ছনা
  6. র্জ = র + জ;  অর্জন
  7. র্ঝ = র + ঝ;  নির্ঝর
  8. র্ট = র + ট; যেমন- আর্ট
  9. র্ড = র + ড;  অর্ডার
  10. র্ণ = র + ণ; যেমন- বর্ণ
  11. র্ত = র + ত;  ক্ষুধার্ত
  12. র্ত্র = র + ত + র;  কর্ত্রী
  13. র্থ = র + থ; যেমন- অর্থ
  14. র্দ = র + দ; যেমন- নির্দয়
  15. র্দ্ব = র + দ + ব;  নির্দ্বিধা
  16. র্দ্র = র + দ + র;  আর্দ্র
  17. র্ধ = র + ধ;  গোলার্ধ
  18. র্ধ্ব = র + ধ + ব;  ঊর্ধ্ব
  19. র্ন = র + ন; যেমন- দুর্নাম
  20. র্প = র + প; যেমন- দর্প
  21. র্ফ = র + ফ; যেমন- স্কার্ফ
  22. র্ভ = র + ভ; যেমন- গর্ভ
  23. র্ম = র + ম; যেমন- ধর্ম
  24. র্য = র + য; যেমন- আর্য
  25. র্ল = র + ল; যেমন- দুর্লভ
  26. র্শ = র + শ; যেমন- স্পর্শ
  27. র্শ্ব = র+ শ + ব;  পার্শ্ব
  28. র্ষ = র + ষ; যেমন- ঘর্ষণ
  29. র্স = র + স; যেমন- জার্সি
  30. র্হ = র + হ;  গার্হস্থ্য
  31. র্ঢ্য = র + ঢ + য;  দার্ঢ্য
  32. ল্ক = ল + ক; যেমন- শুল্ক
  33. ল্ক্য = ল+ক+য; যাজ্ঞবল্ক্য
  34. ল্গ = ল + গ;  বল্গা
  35. ল্ট = ল + ট;  উল্টো
  36. ল্ড = ল + ড;  ফিল্ডিং
  37. ল্প = ল + প;  বিকল্প
  38. ল্‌ফ = ল + ফ;  গল্‌ফ
  39. ল্ব = ল + ব;  বিল্ব, বাল্ব
  40. ল্‌ভ = ল + ভ;  প্রগল্‌ভ
  41. ল্ম = ল + ম; যেমন- গুল্ম
  42. ল্য = ল + য;  তারল্য
  43. ল্ল = ল + ল;  উল্লাস
  44. শ্চ = শ + চ; পুনশ্চ
  45. শ্ছ = শ + ছ;  শিরশ্ছেদ
  46. শ্ন = শ + ন; যেমন- প্রশ্ন
  47. শ্ব = শ + ব; যেমন- বিশ্ব
  48. শ্ম = শ + ম;  জীবাশ্ম
  49. শ্য = শ + য;  অবশ্য
  50. শ্র = শ + র; যেমন- মিশ্র
  51. শ্ল = শ + ল;  অশ্লীল
  52. ষ্ক = ষ + ক; যেমন- শুষ্ক
  53. ষ্ক্র = ষ + ক + র; নিষ্ক্রিয়
  54. ষ্ট = ষ + ট; যেমন- কষ্ট
  55. ষ্ট্য = ষ + ট + য;  বৈশিষ্ট্য
  56. ষ্ট্র = ষ + ট + র;  রাষ্ট্র
  57. ষ্ঠ = ষ + ঠ; যেমন- শ্রেষ্ঠ
  58. ষ্ঠ্য = ষ + ঠ + য; নিষ্ঠ্যূত
  59. ষ্ণ = ষ + ণ; যেমন- কৃষ্ণ
  60. ষ্প = ষ + প;  নিষ্পাপ
  61. ষ্প্র=ষ+প+র; নিষ্প্রয়োজন
  62. ষ্ফ = ষ + ফ;  নিষ্ফল
  63. ষ্ব = ষ + ব;  মাতৃষ্বসা
  64. ষ্ম = ষ + ম; যেমন- উষ্ম
  65. ষ্য = ষ + য;  শিষ্য
  66. স্ক = স + ক; মনোস্কামনা
  67. স্ক্র = স + ক্র;  ইস্ক্রু
  68. স্খ = স + খ; যেমন- স্খলন
  69. স্ট = স + ট;  স্টেশন
  70. স্ট্র = স + ট্র;  স্ট্রাইক
  71. স্ত = স + ত; যেমন- ব্যস্ত
  72. স্ত্ব = স + ত + ব;  বহিস্ত্বক
  73. স্ত্য = স + ত + য; অস্ত্যর্থ
  74. স্ত্র = স + ত + র;  স্ত্রী
  75. স্থ = স + থ; যেমন- দুঃস্থ
  76. স্থ্য = স + থ + য;  স্বাস্থ্য
  77. স্ন = স + ন; যেমন- স্নান
  78. স্প = স + প;  আস্পর্ধা
  79. স্প্র = স + প +র;  স্প্রিং
  80. স্প্‌ল = স+প+ল; স্প্‌লিন
  81. স্ফ = স + ফ; আস্ফালন
  82. স্ব = স + ব; যেমন- স্বর
  83. স্ম = স + ম;  স্মরণ
  84. স্য = স + য; শস্য
  85. স্র = স + র; অজস্র
  86. স্ল = স + ল;  স্লোগান
  87. হ্ণ = হ + ণ;  অপরাহ্ণ
  88. হ্ন = হ + ন; যেমন- চিহ্ন
  89. হ্ব = হ + ব; আহ্বান
  90. হ্ম = হ + ম;  ব্রাহ্মণ
  91. হ্য = হ + য; বাহ্য
  92. হ্র = হ + র; যেমন- হ্রদ
  93. হ্ল = হ + ল;  আহ্লাদ
  94. র্য = র + য; যেমন- আর্য
Ref: wiktionary.org
Top
বাংলা বানানের নিয়ম
তৎসম শব্দ

বানানের সাধারণ অপরিবর্তনীয়তা
তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে৷ কারণ এইসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে৷

ই/ঈ বা উ/ঊ

  • যে-সব তৎসম শব্দে ই/ঈ বা উ/ঊ উভয় শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার কার-চিহ্ন ি বা ু ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: অটবি, আবলি, উর্ণা, উষা, কলশি, কিংবদন্তি, কুটির, খঞ্জনি, চিত্কার, ত্রুটি, ধমনি, ধূলি, পঞ্জি, পদবি, পেশি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, রচনাবলি, সরণি, সূচিপত্র৷
  • তবে বহুল প্রচলিত বলে কিছু শব্দে ঈ-কার বজায় থাকবে। যেমন: গাভী, পল্লী, রানী, শ্রেণী।
  • শব্দের ী (ঈ-কার) তৎসম হলে বজায় থাকবে, কিন্তু শব্দটির তদ্ভব রূপের ক্ষেত্রে ি (ই-কার) লিখতে হবে। যেমন: তৎসমতে পক্ষী, কিন্তু তদ্ভবতে পাখি। এছাড়াও যেমন: হস্তী --> হাতি, বাটী --> বাড়ি, ইত্যাদি।

রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না৷ যেমন: অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য৷

  • সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে৷ যেমন: অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন৷
  • তবে অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, গঙ্গা, বঙ্গ, লঙ্ঘন, সঙ্গ, সঙ্গী, প্রভৃতি সন্ধিবদ্ধ নয় বলে ঙ স্থানে ং হবে না৷

তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, ও মিশ্র শব্দ


ই ঈ উ ঊ

  • সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, বা মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের -কার চিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে ৷ এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে৷ যেমন: গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বেআইনি, ছড়ি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, মমি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, ছুঁড়ি, নিচ, নিচু, ইমান, চুন, পুব, ভুখা, মুলা, পুজো, উনিশ, উনচল্লিশ৷
  • অনুরূপভাবে, -আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে৷ যেমন: খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, সোনালি, হেঁয়ালি৷
  • তবে কোনো কোনো স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার দেওয়া যেতে পারে৷ যেমন: রানী, পরী, গাভী৷
  • সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে কী শব্দটি যেমন: কী করছো? কী পড়ো? কী খেলে? কী আর বলব? কী জানি? কী যে করি! এটা কী বই (অর্থাৎ এটা কীসের বই)? কী করে যাব? কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে? কী আনন্দ! কী দুরাশা!
  • অন্য ক্ষেত্রে অব্যয় পদরূপে ই-কার দিয়ে কি শব্দটি লেখা হবে৷ যেমন: তুমিও কি যাবে? সে কি এসেছিল? কি বাংলা কি ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী৷
  • পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে৷ যেমন: ছেলেটি, লোকটি, বইটি৷
ক্ষ
খির, খুর ও খেত না লিখে সংস্কৃত মূল অনুসরণে ক্ষীর, ক্ষুর ও ক্ষেত-ই লেখা হবে৷ তবে অতৎসম শব্দ খুদ, খুদে, খুর, খেপা, খিধে, ইত্যাদি লেখা হবে৷

মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন
  • তৎসম শব্দের বানানে ণ, ন-য়ের নিয়ম ও শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে৷ এ-ছাড়া তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র কোনো শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা হবে না৷ যেমন: অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, সোনা, হর্ন৷
  • তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে যুক্ত নাসিক্য বর্ণ ণ হয়৷ যেমন: কণ্টক, লুণ্ঠন, প্রচণ্ড৷ কিন্তু তত্সম ছাড়া অন্যান্য সকল শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-য়ের আগেও কেবল ন হবে৷ যেমন: ঘন্টা, প্যান্ট, প্রেসিডেন্ট, লন্ঠন, গুন্ডা, পান্ডা, ব্যান্ড, লন্ডভন্ড৷
শ, ষ, স
  • তৎসম শব্দে শ, ষ, স-য়ের নিয়ম মানতে হবে৷ এ-ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংস্কৃতের ষত্ব-বিধি প্রযোজ্য হবে না৷
  • বিদেশী মূল শব্দে শ, স-য়ের যে প্রতিষঙ্গী বর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তাই ব্যবহার করতে হবে৷ যেমন: সাল (=বত্সর), সন, হিসাব, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, শৌখিন, মসলা, জিনিস, আপস, সাদা, পোশাক, বেহেশ্ ত, নাশতা, কিশমিশ, শরম, শয়তান, শার্ট, স্মার্ট৷ তবে, পুলিশ শব্দটি ব্যতিক্রমরূপে শ দিয়ে লেখা হবে৷
  • তৎসম শব্দে ট, ঠ বর্ণের পূর্বে ষ হয়৷ যেমন: বৃষ্টি, দুষ্ট, নিষ্ঠা, পৃষ্ঠা৷ কিন্তু বিদেশী শব্দে এই ক্ষেত্রে স হবে৷ যেমন: স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর, স্ট্রিট৷ কিন্তু খ্রিষ্ট যেহেতু বাংলায় আত্তীকৃত শব্দ এবং এর উচ্চারণও হয় তত্সম কৃষ্টি, তুষ্ট, ইত্যাদি শব্দের মতো, তাই ষ্ট দিয়ে খ্রিষ্ট শব্দটি লেখা হবে৷

আরবি-ফারসি থেকে আগত স/শ
আরবি-ফারসি শব্দে 'সে' , 'সিন্', 'সোয়াদ' বর্ণগুলির প্রতিবর্ণরূপে স, এবং 'শিন্' -এর প্রতিবর্ণরূপে শ ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, সালাত, এশা, শাবান (হিজরি মাস), শাওয়াল (হিজরি মাস), বেহেশ্‌ত৷ এই ক্ষেত্রে স-এর পরিবর্তে ছ লেখার কিছু কিছু প্রবণতা দেখা যায়, তা ঠিক নয়৷ তবে যেখানে বাংলায় বিদেশী শব্দের বানান সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে স ছ-য়ের রূপ লাভ করেছে সেখানে ছ ব্যবহার করতে হবে৷ যেমন: পছন্দ, মিছিল, মিছরি, তছনছ৷

ইংরেজি থেকে আগত s
ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশী s বর্ণ বা ধ্বনির জন্য স এবং sh, -sion, -ssion, -tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে৷

জ, য
বাংলায় প্রচলিত বিদেশী শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে৷ যেমন: কাগজ, জাহাজ, হুকুম, হাসপাতাল, টেবিল, পুলিশ, ফিরিস্তি, হাজার, বাজার, জুলুম, জেব্রা৷ কিন্তু ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে 'যে', 'যাল', 'যোয়াদ', 'যোয়া' রয়েছে, যার ধ্বনি ইংরেজি z-এর মতো৷ সেক্ষেত্রে উক্ত আরবি বর্ণগুলির জন্য য ব্যবহার হওয়া সঙ্গত৷ যেমন: আযান, এযিন, ওযু, কাযা, নামায, মুয়ায্ যিন, যোহর, রমযান৷ তবে কেউ ইচ্ছা করলে এই ক্ষেত্রে য-এর পরিবর্তে জ ব্যবহার করতে পারেন৷ জাদু, জোয়াল, জো, ইত্যাদি শব্দ জ দিয়ে লেখা বাঞ্ছনীয়৷

এ, অ্যা
  • বাংলায় এ বা ে-কার দ্বারা অবিকৃত এ এবং বিকৃত বা ব্যাঁকা অ্যা এই উভয় উচ্চারণ বা ধ্বনি নিষ্পন্ন হয়৷ তত্সম বা সংস্কৃত ব্যাস, ব্যায়াম, ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি, ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরূপভাবে লেখার নিয়ম আছে৷
  • অনুরূপ তৎসম এবং বিদেশী শব্দ ছাড়া অন্য সকল বানানে অবিকৃত-বিকৃত নির্বিশেষে এ বা ে-কার হবে৷ যেমন: দেখে, দেখি, জেনো, কেন, কেনো (ক্রয় করো), গেল, গেলে, গেছে৷
  • বিদেশী শব্দে অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এ বা ে-কার ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: এন্ড (end) , নেট, বেড, শেড৷
  • বিদেশী শব্দে বিকৃত বা ব্যাঁকা উচ্চারণে অ্যা বা (য-ফলা+আ-কার) ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: অ্যান্ড (and), অ্যাবসার্ড, অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাক, ম্যানেজার, হ্যাট৷
  • তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষ কিছু দেশী শব্দ রয়েছে যার (য-ফলা+আ-কার)-যুক্ত রূপ বহুল-পরিচিত৷ যেমন: ব্যাঙ, চ্যাঙ, ল্যাঙ, ল্যাঠা৷ এ-সব শব্দে (য-ফলা+আ-কার) অপরিবর্তিত থাকবে৷
ও এবং োকার
বাংলা অ-কারের উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ও-কার হয়৷ এই উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য ক্রিয়াপদের বেশ কয়েকটি রূপের এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনো আদিতে অনেকে যথেচ্ছভাবে ো-কার ব্যবহার করছেন৷ যেমন: ছিলো, করলো, বলতো, কোরছ, হোলে, যেনো, কেনো (কীজন্য), ইত্যাদি ো-কারযুক্ত বানান লেখা হচ্ছে৷ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অনুরূপ ো-কার ব্যবহার করা হবে না৷ বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে এমন অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ো-কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব ঘটতে পারে৷

ক্রিয়াপদের যা যা রূপে ো-কার লাগানো হবে:
  • তুমি, তোমরা (সাধারণ বর্তমান কাল): ধরো, চড়ো, বলো, হও, খাও, যাও, বানাও
  • তুমি, তোমরা (ঘটমান বর্তমান কাল): ধরছো, চড়ছো, বলছো, হচ্ছো, খাচ্ছো, যাচ্ছো, বানাচ্ছো
  • তুমি, তোমরা (পুরাঘটিত বর্তমান কাল): ধরেছো, চড়েছো, বলেছো, হয়েছো, খেয়েছো, গেছো, বানিয়েছো
  • তুমি, তোমরা (বর্তমান অনুজ্ঞা): ধরো, চড়ো, বলো, হও, খাও, যাও, বানাও
  • তুমি, তোমরা (ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা): ধোরো, চোড়ো, বোলো, হয়ো, খেও, যেও, বানিও
  • সাধিত ধাতুর অসমাপিকা রূপ: ধরানো, চড়ানো, বলানো, খাওয়ানো, বানানো
ক্রিয়াপদের যা যা রূপে ো-কার লাগানো হবে না:
  • এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (সাধারণ অতীত কাল): ধরল, চড়ল, বলল, হল, খেল, গেল, বানাল
  • এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (ঘটমান অতীত কাল): ধরছিল, চড়ছিল, বলছিল, হচ্ছিল, যাচ্ছিল, বানাচ্ছিল
  • এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (পুরাঘটিত অতীত কাল): ধরেছিল, চড়েছিল, বলেছিল, হয়েছিল, গেছিল/গিয়েছিল, বানিয়েছিল
  • এ, এরা, ও, ওরা, সে, তারা (নিত্যবৃত্ত অতীত কাল): ধরত, চড়ত, বলত, হত, খেত, যেত, বানাত
  • আমি, আমরা (সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল): ধরব, চড়ব, বলব, হব, খাব, যাব, বানাব
  • পুরাঘটিত অসমাপিকা রূপ: ধরে (ধোরে বা ধ'রে নয়), চড়ে, বলে, হয়ে
অন্যান্য শব্দ:
  • ো-কারযুক্ত: তো, মতো, ভালো, আলো, কালো, কেন (কিসের জন্য), যেন, কোনো (বা কোনও), এখনো (বা এখনও), তখনো (বা তখনও), কারো (বা কারও)
  • ো-কারবিহীন: বড় (বড়ো নয়), ঘন (ঘনো নয়), মন (মোন নয়), একজন (একজোন নয়), এক শ (অর্থাৎ ১০০; এক শো বা এক শ' নয়)

ং, ঙ
তৎসম শব্দে ং এবং ঙ যেখানে যেভাবে ব্যবহার্য ও ব্যাকরণসম্মত সেইভাবে ব্যবহার করতে হবে৷ এ-সম্পর্কে পূর্বে উইকিপিডিয়া:বাংলা বানানের নিয়ম#তৎসম শব্দ অনুচ্ছেদে কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে৷ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দের বানানের ক্ষেত্রে ওই নিয়মের বাধ্যবাধকতা নেই৷ তবে এই ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত হবে৷ যেমন: রং, সং, পালং, ঢং, রাং, গাং৷ তবে শব্দে অব্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে ঙ হবে৷ যেমন: বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের৷ বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ-দু'টি ং দিয়ে লিখতে হবে৷ বাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে৷

রেফ ও দ্বিত্ব
তৎসম শব্দের অনুরূপ বানানের ক্ষেত্রে যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, অ-তৎসম সকল শব্দেও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না৷ যেমন: কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার৷

বিসর্গ
শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না৷ যেমন: কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ৷ পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে৷ তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়৷ যেমন: দুস্থ, নিস্পৃহ৷

বিদেশী শব্দ ও যুক্তবর্ণ
বাংলায় বিদেশী শব্দের বানানে যুক্তবর্ণকে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ যুক্তবর্ণের সুবিধা হচ্ছে তা উচ্চারণের দ্বিধা দূর করে৷ তাই ব্যাপকভাবে বিদেশী শব্দের বানানে যুক্তবর্ণ বিশ্লিষ্ট করা অর্থাত্‍ ভেঙে দেওয়া উচিত নয়৷ শব্দের আদিতে তো অনুরূপ বিশ্লেষ সম্ভবই নয়৷ যেমন: স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং৷

হস্-চিহ্ন
  • হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে৷ যেমন: কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, ডিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক, করিস, দিস, দেখলে৷
  • তবে যদি ভুল উচ্চারনের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে৷ যেমন: উহ্, যাহ্, ওয়াক্‌ফ৷
  • যদি অর্থের বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে তাহলেও তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে৷ যেমন: কর্, ধর্, মর্, বল্।

ঊর্ধ্ব-কমা
ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে৷ যেমন: করল (<কর'ল<করিল), ধরত (<ধর'ত<ধরিত), বলে (<ব'লে<বলিয়া), হয়ে (হ'য়ে<হইয়া), দু জন (<দু' জন), চার শ (<চার শ'), চাল (<চা'ল<চাউল), আল (<আ'ল<আইল)৷

বিবিধ


সমাসবদ্ধ পদ

  • সমাসবদ্ধ পদগুলি একসঙ্গে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা চলবে না৷ যেমন: সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বারবার, বিষাদমন্ডিত, সমস্যাপূর্ণ, অদৃষ্টপূর্ব, দৃঢ়সঙ্কল্প, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র৷
  • তবে বহুল প্রচলিত বলে কিছু শব্দে ঈ-কার বজায় থাকবে। যেমন: গাভী, পল্লী, রানী, শ্রেণী।
  • বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ পদটিকে একটি, কখনো একটির বেশি হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়৷ যেমন- মা-মেয়ে, মা-ছেলে, বেটা-বেটি, বাপ-বেটা, ভবিষ্যত-তহবিল, সর্ব-অঙ্গ, বে-সামরিক, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ, কিছু-না-কিছু৷

নঞর্থক শব্দ
নঞর্থক শব্দ আলাদা করে লেখা হবে, যেমন: জানি না ("জানিনা" নয়), হত না ("হতনা" নয়), শুনি নি ("শুনিনি" নয়), খাব না ("খাবনা" নয়), পান নি ("পাননি" নয়)।

১.সমাসবদ্ধ পদ
সমাসবদ্ধ পদের মধ্যে ফাঁক হবে না। যেমন: বুদ্ধিজীবী, মরণশীল, হাতিঘোড়া। অর্থ ¯পষ্ট করার অথবা দীর্ঘ শব্দের দৃষ্টিকটুতা হ্রাসের প্রয়োজনে পদের মাঝখানে হাইফেন (-) দেয়া যায়; তবে ফাঁক রাখা অশুদ্ধ। যেমন: মরণশীল-কে মরণ শীল করা কী শুদ্ধ হবে? অবশ্যই না। আম-জাম-লিচু-কলা প্রভৃতি ছিল ঝুড়িতে।

২. ক্রিয়া পদের পূর্বে ব্যবহৃত হলে ‘না’ অব্যয়ের পর হাইফেন বসবে। যেমন: না-দেখা, না-খাওয়া, না-যাওয়া।
তবে ক্রিয়া ব্যতিরেকে অন্য কোন শব্দের আদিতে ব্যবহৃত ‘না’ অব্যয়ের পর হাইফেন দেওয়া বিধেয় নয়। যেমন: নাবালক, নাহক, নাজায়েজ, নাপাক।

৩. কোন পদের পূর্বে বিশেষণ বসানো প্রয়োজন হলে কাঙ্খিত বিশেষণটি পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে পৃথক বসে। যেমন নীল আকাশ, জ্যোৎস্না রাত, লাল শাড়ি, পাকা বাড়ি। তবে বিশেষ্যের সঙ্গে যে বিশেষণ বসানো হয় তার কোন বিশেষণ থাকলে পদদ্বয় একত্রে বসে। যেমন: বিশ্বসুন্দরী, রক্তলাল ইত্যাদি।

৪.‘মহা’ শব্দটি ভাল, উত্তম কিংবা মহান অর্থে ব্যবহৃত হলে সংশ্লিষ্ট পদের সঙ্গে একত্রে বসে। যেমন- মহানবী, মহাপুরুষ, মহাজ্ঞানী। তবে, ‘মহা’ শব্দটি বিরাট কিংবা প্রচ- অর্থে ব্যবহৃত হলে পৃথক বসে। যেমন: মহা পাপী, মহা বোকা, মহা লুচ্চা, মহা ঝিল ইত্যাদি।

৪. ‘আগামী’ ও ‘গত’ শব্দ দুটির পরবর্তী শব্দ পৃথক বসবে। যেমন- আগামী কাল, আগামী বছর, গত দিন, গত মাস, গত কাল, গত বার, আগামী মৌসুম, আগামী সন, গত বছর ইত্যাদি।

৫. সংখ্যাবাচক শব্দ একত্রে লেখা যায়। যেমন: দুজন, পাঁচহাজার টাকা, নয়গাড়ি ইত্যাদি।

৬ . ‘কাল’ এবং ‘ক্ষণ’ শব্দের পূর্ববর্তী বিশেষণ পৃথক বসে না, একত্রে বসে। যথা: (একাল, এক্ষণ), (এতকাল, এতক্ষণ), (কতকাল, কতক্ষণ), (ততকাল, যতক্ষণ), (বহুকাল, বহুক্ষণ), (কিছুকাল, কিছুক্ষণ) ইত্যাদি।

৭. ‘এত, তত, অনেক, কয়েক, যত, বহু, কত, কিছ’ু ইত্যাদির পরে ‘কাল এবং ক্ষণ’ ছাড়া অন্য শব্দ যুক্ত হলে তা পৃথক বসবে। উদাহরণ: এত দিন, কত দিন, তত দিন, কত বছর, বহু দিন, অনেক সময়, এত লোক, কত টাকা, কিছু দিন।

৮. ‘না নাই নেই ’ ইত্যাদি ‘নঞর্থক অব্যয়’ শব্দ বা পদের শেষে সেঁটে বসে না, পৃথক বসে। যথা- খাব না, পাব না, যাব না, দেখি নাই, মনে নেই, পান না, খায় না, যায় নাই ইত্যাদি। তবে ‘নঞর্থক’ শব্দ ‘না’ পদের সাথে সেঁটে বসবে। যেমন: পাননি, খাননি, দেননি ইত্যাদি।

৯. ‘এক’ শব্দটি সংখ্যা না বুঝিয়ে সংযোজন বা সম্মিলন অর্থ বুঝালে ‘এক’ শব্দের পরবর্তী শব্দটি সংশ্লিষ্ট শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। যথা: একসঙ্গে, একযাত্রা, একমাত্র, একবার ইত্যাদি।

১০. ‘নানা’ কিংবা ‘নানান’ শব্দটি সাধারণত পৃথক বসে। যেমন- নানান রকম মানুষ, নানা রকম কথা, নানান ফল, নানান দেশ ইত্যাদি।

১১. ‘পর’ শব্দ দূরবর্তী, পরবর্তী, অন্য কিংবা ভিন্ন অর্থ জ্ঞাপন করলে ‘পর’ শব্দটি পরবর্তী শব্দের সাথে সেঁটে বসবে।
যেমন- পরজীবী, পরনারী, পরধর্ম, পরকাল, পরলোক, পরবাসী। ‘মাত্র’ শব্দের অর্থ প্রত্যেক, পর্যন্ত বা তখনই বোঝালে ‘মাত্র’ শব্দটি পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। যেমন: বলামাত্র, দেখামাত্র, শুনামাত্র।

১২. ‘প্রতি’ শব্দটি ‘ব্যাপ্তি’ অর্থে ব্যবহৃত হলে তা পূর্বের বা পরবর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে, ফাঁক রাখে না। যেমন: প্রতিশব্দ, প্রতিবছর, প্রতিক্ষণ, জনপ্রতি।

১৩. ব্যাপী, সমেত, সহ, ভাবে, বহুল প্রভৃতি শব্দ পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। যেমন- দেশব্যাপী, প্রত্যক্ষভাবে, জনবহুল, মালসমেত, বহুলপ্রচলিত, জরুরিভাবে, আম, জাম, কলা ও লিচুসহ ইত্যাদি।

১৪. বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত শব্দ ‘বহু’ ‘গত’ ও ‘পূর্ব’ শব্দগুলো স¤পর্কযুক্ত শব্দের পূর্বে একত্রে বসে। উদাহরণ: বহুকাল, বহুদিন, বহুমূল্য, বহুমুখী, বহুজন, গতযৌবন, গতজীবন, পূর্বশর্ত, পূর্বমুখী, অদৃষ্টপূর্ব।

ব্যতিক্রম: বহু কষ্ট, বহু যন্ত্রণা, বহু লোক।

১৫. ব্যতীত এবং ব্যতিরেকে ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘বিনা’ শব্দটি পৃথক বসে। উদাহরণ: বিনা বাক্যে, বিনা যুদ্ধে, বিনা মূল্যে, বিনা পরিশ্রমে।

১৬.‘বিশেষ’ ও ‘বহুল’ শব্দদ্বয় স¤পর্কযুক্ত শব্দের পরে বসলে একত্রে সেঁটে বসে। যেমন: অবস্থাবিশেষ, দর্শনবিশেষ, পু¯পবিশেষ, ইতরবিশেষ, ঘটনাবহুল, ব্যয়বহুল, কষ্টবহুল ইত্যাদি। কিন্তু ‘বিশেষ’ ও ‘বহুল’ শব্দদ্বয় স¤পর্কযুক্ত শব্দের পূর্বে বসলে পরস্পরের মধ্যে ফাঁক রেখে বসে। যেমন: বিশেষ সভা, বিশেষ আলাপ, বিশেষ বিবেচনা, বহুল প্রচলিত, বহুল প্রয়োগ, বহুল প্রচার, বহুল আলোচিত ইত্যাদি।

‘মাত্র’ শব্দটি স¤পর্কযুক্ত শব্দের পূর্বে বসলে পৃথক এবং পরে বসলে একত্রে বসবে। উদাহারণ- মাত্র বিশ মিনিট, মাত্র একটা ভুল, দেখামাত্র, কিছুমাত্র, তিলমাত্র, বলামাত্র, দেখামাত্রা, একমাত্র, কেবলমাত্র, প্রাণীমাত্র।

১৭.এছাড়া, তাছাড়া, যেভাবে, সেভাবে, যেক্ষেত্রে, সেক্ষেত্রে, একাল, সেকাল, এরকম, সেরকম ইত্যাদি একসঙ্গে লেখা হবে।

Ref: Wikipedia
Top
যতি-চিহ্নের ব্যবহার
যতি-চিহ্ন, বিরাম-চিহ্ন, ছেদ-চিহ্ন সমার্থক শব্দ। বাংলায ব্যবহৃত যতি-চিহ্নগুলো নিচে দেখানো হল। ১৮টি যতি-চিহ্নের মধ্যে কিছু আছে যা বাক্যের ভিতরে কাজে লাগাতে হয়, আর কিছু চিহ্ন রয়েছে যা ব্যবহৃত হয় বাক্যের শেষে।
বাক্যান্তর্গত যতি-চিহ্ন মোট ১০টি : কমা, সেমিকোলোন, হাইফেন, কোলোন, ড্যাশ, কোলোনড্যাশ, উর্ধ্বকমা, বিকল্পচিহ্ন, একবিন্দু, ত্রিবিন্দু, এক-উদ্ধৃতিচিহ্ন, জোড়-উদ্ধৃতিচিহ্ন।
বাক্যশেষে ব্যবহার্য যতি-চিহ্ন ৪টি : এক-দাঁড়ি, প্রশ্নচিহ্ন, বিস্ময়চিহ্ন, ত্রিবিন্দু।
বাক্যের ভিতরে এবং পূর্বে বা পরে বসতে পারে ৬টি যতি-চিহ্ন : ত্রিবিন্দু, এক-উদ্ধৃতিচিহ্ন, জোড়-উদ্ধৃতিচিহ্ন, বিকল্পচিহ্ন, প্রথম-বন্ধনী, তৃতীয়-বন্ধনী।

কমা (,)
বাক্যের ভিতরের বিরাম-চিহ্ন কমা। বাক্যটি বড় হলে দম নেওয়ার সুবিধার্থে, বক্তব্য একাধিক হলে স্পষ্টতা আনার লক্ষ্যে অল্পক্ষণ বিরতির জন্য কমার ব্যবহার হয়। যেমন:
নিন্দা-বিরোধ গায়ে বাজে না, এমন কথা অল্প লোকই বলিতে পারে।
অন্নপূর্ণা জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তিনি তোমাকে ভালোবাসেন না?’

সেমিকোলোন (;)
বাক্যের একাধিক বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য সেমিকোলোন ব্যবহার করা হয়। সেমিকোলোনে কমার চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি সময়ের জন্য থামতে হয়। যেমন:
আমি যা-কিছু বলি ওরা তা শোনে না; আমি যা করি তা ওরা দেখে না, দেখতে চায় না।

হাইফেন (-)
হাইফেন সত্যিকার অর্থে সংযোগ চিহ্ন। হাইফেন সবসময় বসে দুই বা ততোধিক শব্দের মধ্যে। যেমন:
পশু-পক্ষী, সোনা-রুপো-মণি-মুক্তো, সদ্য-চুলে-পাক-ধরা মাথাটা ইত্যাদি।

কোলোন (:)
আগে যেখানে ড্যাশ ব্যবহার হত এখন সেখানে কোলোন ব্যবহার হচ্ছে। কোলোনের কাজ হল বাক্যের অন্তর্গত কোনো অংশকে বিশদ করা। কোলোন (:) ও বিসর্গ (‌ঃ) এক নয়; কোলোনের মাঝখানে কোনো ফাঁক থাকে না। যেমন:
চল্লিশ বছরে আমাদের পরিবর্তন এই হয়েছে: আমরা অসাধু, কপট, কলহপরায়ণ, মিথ্যাচারী, বুলিসর্বস্ব, নিষ্ঠুর ও ধর্মান্ধ একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি।

ড্যাশ (—)
হাইফেনের চেয়ে ড্যাশ বেশি লম্বা। এটি হচ্ছে ইংরেজিতে 'Em Dash'। (En Dash, Em Dash, and Hyphen) মূল বাক্যের ভিতরে যদি খণ্ডবাক্য পুরে দেওয়া থাকে, তবে খণ্ডবাক্যের দু-পাশে ড্যাশ বসবে। কথোপকথন বা সংলাপের শুরুতে ড্যাশ বসতে পারে। (কীবোর্ডের Alt বাটন চেপে রেখে ডান পাশের নাম্বার কীবোর্ডে 0151 চাপলে এই চিহ্নটি আসবে।) যেমন:
হঠাৎ মুহুর্তের জন্য—কী কারণে বুঝলাম না—আমাদেরও একটু যেন মনখারাপ হল।
—এমন কথা তুমি বলতে পারলে?
—সে তো সত্যি কথা! এই দেখ বাবার চিঠি।

কোলোনড্যাশ (:–)
কোলোনড্যাশের ব্যবহার এখন খুব কম। এর জায়গা দখল করেছে কোলোন বা ড্যাশ। কোলোনড্যাশের কাজ বাক্যের কোনো অংশকে বিশদ করা। উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত দিতে হলে তার আগেও ব্যবহার হয়।  যেমন:
ধর্মান্ধ কিছু জাতির উদাহরণ:– পাকিস্তান, ইসরাইল, ইরান। 

প্রশ্নচিহ্ন (?)
প্রশ্নবোধক বাক্যের শেষে প্রশ্নচিহ্ন বসবে। যেমন:
আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?
লেখক শরৎচন্দ্র চিরকুমার (?) ছিলেন। ( মনের সন্দেহ প্রকাশ করার জন্য)

বিস্ময়চিহ্ন (!)
বিস্ময়, আবেদন, আর্তি, হতাশা, আনন্দ ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে বিস্ময়চিহ্ন বসে। যেমন:
অবাক কান্ড! লোকটা হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল।
টাকা-টাকা করতে-করতে জীবন শেষ!

উর্ধ্বকমা (’)
ঊর্ধ্বকমার প্রয়োগ এখন খুব একটা নেই। ঊর্ধ্বকমা প্রথমত, লোপচিহ্ন হিসেবে ব্যবহার হয়। যেমন:
তোর মা’র কাছ থেকে কিছু খাওয়ার নিয়ে আয়।
২৬শে মার্চ, ’৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। 

বিকল্পচিহ্ন (/)
একাধিক শব্দ বা বাক্যের বিকল্প বোঝাতে বিকল্পচিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন:
ছুরি/কাঁচি/ব্লেড—হাতের কাছে যা পাও, জলদি নিয়ে এসো।

একবিন্দু, (.)
একবিন্দু বা ইংরেজি full stop বাংলায় সংক্ষেপণের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার হয়। যেমন:
এম.এ. , বি.এ. ইত্যাদি।

ত্রিবিন্দু, (...)
কোনো কথা বাদ দেওয়া হয়েছে কিংবা অসমাপ্ত রেখে দেওয়া হয়েছে—বোঝাতে ত্রিবিন্দু ব্যবহার করা হয়। (কীবোর্ডের Alt বাটন চেপে রেখে ডান পাশের নাম্বার কীবোর্ডে 0133 চাপলে এই চিহ্নটি আসবে।) যেমন:
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, …”
পাগল কি আমিই, নাকি অন্যরা—যারা …

উদ্ধৃতিচিহ্ন (‘ ’ অথবা “ ”)
অন্যের কথা উদ্ধৃত করতে কিংবা কোনো কথায় পাঠকের মনোযোগ দাবি করতে উদ্ধৃতিচিহ্নের ব্যবহার হয়। যেমন:
গ্রিক শব্দ ‘átomos’ থেকে এসেছে ইংরেজি শব্দ  ‘atom’ শব্দটি।
অন্নপূর্ণা জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তিনি তোমাকে ভালোবাসেন না?’
এই “ভারতবর্ষ”  কাগজেই নরেশবাবু লিখিয়াছিলেন, ‘না জানিয়া শাস্ত্রের দোহাই দিয়ো না।’

প্রথম-বন্ধনী ( )
কোনো বক্তব্যকে বিশদ করতে প্রথম বন্ধনীর ব্যবহার হয়। যেমন:
বি.এ. (অনার্স) এম.এ.
রাজনীতিতে তিনি পল্টিবাজ (যারা বারবার দল পাল্টায়) হিসেবে পরিচিত।

তৃতীয়-বন্ধনী [ ]
অন্যের কথার মধ্যে অর্থাৎ উদ্ধৃত বাক্যের মধ্যে নিজের কথা ঢোকাতে গেলে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে লিখতে হবে। যেমন:
ছাত্রটি লিখেছে, ‘রবিন্দ্রনাথ [রবীন্দ্রনাথ] ১৯২৩ [১৯১৩] সালে নভেল [নোবেল] পুরষ্কার [পুরস্কার] পেয়েছিলেন।’ 

Top
জেনে রাখা ভালো
১। দেশ, ভাষা ও জাতির নামের ক্ষেত্রে সর্বদা ই-কার লিখতে হবে
দেশ : ইতালি, জার্মানি, গ্রিস, কাশ্মির, কেনিয়া, আর্মেনিয়া, সৌদি আরব, হাঙ্গেরি ইত্যাদি।
ভাষা : আরবি, নেপালি, জাপানি, পাঞ্জাবি, সিলেটি, হিন্দি, তিব্বতি, ইংরেজি, হিব্রু ইত্যাদি।
জাতি : বাঙালি, আফগানি, ইরানি, মারাঠি, ইহুদি, গ্রিক, জাপানি, পাঞ্জাবি, তুর্কি ইত্যাদি।
[ব্যতিক্রম হল : চীন দেশ, চীনা ভাষা, চীন জাতি। কারণ পুরাতন অভ্যাস!]
২। এমনকি / এমন কী
এমনকি : অধিকন্তু বা আরও অর্থে ব্যবহৃত হয়। এমনকি আমার টাকাও চুরি হয়েছে।
এমন কী : সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ রূপে স্বতন্ত্র পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমন কী ক্ষতি হয়েছে তোমার! এখানে এমন কী একটিই পদ, ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে।
৩। এক রকম / একরকম
'সমধর্মী' : এখানকার সব বাড়ি এক রকম, নম্বর জানা না থাকলে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।
'এক ধরনের' : রাজশেখর বসুর অভিধান এক রকম, কাজী আবদুল ওদুদের অন্য রকম।
'প্রায়' : শকুন এতটাই বিরল হয়ে গেছে যে এখন আর একরকম চোখেই পড়ে না।
'কোনোভাবে' : যত দুঃখই থাক, দিন একরকম কেটে যাচ্ছে তো।
৪। তার পর / তারপর
'কিছু ঘটার পর' : আগে বিয়ে হবে, তার পর না বৌভাত!
'কোনো কিছুর অব্যবহিত পরে' : আমি তাকে খবরটা দিয়ে তারপরই তো হাসপাতালে ছুটলাম।
Top
৫। নাই / নি
কথ্য বাংলায় আমরা অনেকেই 'নাই' ব্যবহার করি, যা আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব থেকে এসেছে। 'নাই' সাধু বাংলায় ব্যবহৃত রূপ, কথ্য বা চলিত ভাষায় 'নি' হয়ে যাবে। যেমন : আমি বলি নাই > আমি বলি নি; তাহারা যায় নাই > তারা যায় নি; ট্রেন ঠিক সময়ে আসে নাই > ট্রেন ঠিক সময়ে আসে নি। 'নি'-র আরেকটা কথ্য রূপ আছে 'নে' - কেবল উত্তম পুরুষে বলা হয় : আমি করি নে, খাই নে ইত্যাদি। তা ছাড়া ব্যবহার হয় আজ্ঞায় বা অনুরোধে : 'তুই যাসনে সেখানে।' 'নে' আবার বলার ভঙ্গিও : হাত-মুখ ধুয়ে নে। এই 'নে' অর্থ 'নাও'।
৬। কি না / কিনা / কি-না
কি-না : অশুদ্ধ। একইভাবে একক পদ হিসেবে কী না ব্যবহার করাটাও ভুল।
কি না : সন্দেহসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : টাকা দেবে কি না জানি না।
বিতর্কসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- আমার লেখায় কোনো ভুল আছে কি না বলো?
প্রশ্নবোধক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : তুমি যাবে কি না? ব্যবহার করাটাও ভুল।
কিনা : এই কারণে বা যেহেতু অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : জ্বর হয়েছে কিনা তাই আসেনি।
অর্থাৎ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন : হ্রী কিনা লজ্জা।
বাক্যালঙ্কার (বাক্যে যা না থাকলেও অর্থ পরিবর্তন হয় না) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : আর মা কিনা ঘরের গিয়ে বসে আছে (এখানে 'কিনা' ছাড়াও বাক্যের অর্থ একই থাকে)।
৭। নয় তো / নয়তো
'নয় তো ' মানে নয়, নেতিবাচক। যেমন : খাঁটি মুক্তো নয় তো, নকল মুক্তো পরে নিজেই জানান দেবে। আজ নয়, তো কাল যাবে?
'নয়তো' মানে বিকল্প পথ। যেমন : তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যেও, নয়তো যেও না। রাত দশটার মধ্যে ঘরে পৌঁছুতেই হবে, নয়তো মা খুব ভাববে।
লক্ষণীয়, 'হয় তো' মানে হাঁ-সূচক, আর 'হয়তো' বোঝায় সম্ভাব্যতা, অনিশ্চয়তা।
Top
৮। ত্র / ক্র / ত্রু
'ত্র' = ত-য়ে র-ফলা (উদাহরণ: ত্রাণ, পত্র)
'ক্র' = ক-য়ে র-ফলা (উদাহরণ: বক্র, শুক্র)
'ত্রু' = ত-য়ে র-ফলা ও হ্রস্ব উ-কার (উদাহরণ: ত্রুটি, শত্রু)
৯। ক্ক / ক্ব
'ক্ক' - ক+ক একটি দ্বিত্ব-ব্যঞ্জন। নাম: ক-য়ে ক। (উদাহরণ: মক্কা)
'ক্ব' - ক+ব নাম: ক-য়ে ব-ফলা। (উদাহরণ: পক্ব)
এদের উচ্চারণ এক হলেও বানান আলাদা।
১০। ক্ষ / হ্ম
'ক্ষ' - ক+ষ নাম: ক-য়ে মূর্ধণ্য-ষ বা খিউ। (উদাহরণ: ক্ষতি, ক্ষমা)
'হ্ম' - হ+ম নাম: হ-য়ে ম বা হ-য়ে ম-ফলা। (উদাহরণ: ব্রাহ্মণ)
এদের উচ্চারণ হুবহু যুক্তব্যঞ্জনের হয় না।
১১। ঙ্খ / স্খ
'ঙ্খ' - ঙ+খ নাম: উঁয়োয় খ। (উদাহরণ: শঙ্খ)
'স্খ' - স+খ নাম: দন্ত্য স-য়ে খ। (উদাহরণ: স্খলিত)
ছাপার অক্ষরের অস্বচ্ছতার জন্য অনেক সময় এ দুটি হরফে পার্থক্য করতে ভুল হয়।
Top
১২। ট্ট / ট্র
'ট্ট' - ট+ট একটি দ্বিত্ব-ব্যঞ্জন। নাম: ট-য়ে ট। (উদাহরণ: চট্টগ্রাম, অট্টালিকা)
'ট্র' - নাম: ট-য়ে র-ফলা। (উদাহরণ: ট্রেন, ট্রাক)
দেখতে অনেকটা মিল থাকলেও এ দুটির গঠন ও উচ্চারণে যথেষ্ট পার্থক্য।
১৩। ঞ্চ / ঞ্ছ / ঞ্ঝ / চ্ঞ
'ঞ্চ' - নাম: ইঁয়োয় চ (ঞ+চ)। যেমন: বঞ্চনা (বন্‌চোনা)
'ঞ্ছ' - নাম: ইঁয়োয় ছ (ঞ+ছ)। যেমন: লাঞ্ছনা (লান্‌ছোনা)
'ঞ্ঝ' - নাম: ইঁয়োয় ঝ (ঞ+ঝ)। যেমন: ঝঞ্ঝা (ঝন্‌ঝা)
'চ্ঞ' - নাম: চ-য়ে ইঁয়ো (চ+ঞ)। যেমন: যাচ্ঞা (জাচ্‌না)
এ চারটি ক্ষেত্রেই /ঞ/-র উচ্চারণ /ন্/-র মতো হয় ।
১৪। ঞ্জ / জ্ঞ
'ঞ্জ' - নাম: ইঁয়োয় জ (ঞ+জ)। যেমন: গুঞ্জন (গুন্‌জন্)
'জ্ঞ' - নাম: বর্গীয় জ-য়ে ঞ (জ+ঞ)। যেমন: বিজ্ঞান (বিগ্‌গ্যাঁন)
১৫। ক্ত / ত্ত
'ক্ত' - নাম: ক-য়ে ত (ক+ত)। যেমন: রক্ত
'ত্ত' - নাম: ত-য়ে ত (ত+ত)। যেমন: মত্ত
১৬। ন্থ / স্থ
'ন্থ' - নাম: দন্ত্য-ন-য়ে থ (ন+থ)। যেমন: পান্থ
'স্থ' - নাম: দন্ত্য-স-য়ে থ (স+থ)। যেমন: অবস্থা
Top
তথ্যসূত্র:
১। বাংলা অভিধান - বাংলা একাডেমী, ২। বাংলা লেখার নিয়মকানুন - হায়াৎ মামুদ,
৩। বাংলা বানানের নিয়ম - মাহবুবুল হক, ৪। ব্লগ, ফোরাম ও পত্র-পত্রিকা।

Copyright : www.sadharongyan.com