বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি, বিস্তার ও বৈশিষ্ট্য

মানুষের লিখিত ইতিহাসের বয়স মাত্র ৫০০০ বছর। তাই এর আগের ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব নয়। কালের আবর্তে অনেক ধর্ম হারিয়ে গেছে, আবার অনেক নতুন ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে এখনো টিকে আছে এ ধরনের প্রথম সারির ধর্মগুলোর উৎপত্তি, ব্যাপ্তিকাল ও মৌলিক বৈশিষ্ট এখানে আলোচনা করা হল।

সময়রেখা
religions-timeline
মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনশীল ধারায় প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত যে সব ধর্মের অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে জানা যায় তা উপরের ছবিতে দেখানো হল।

ধর্ম প্রবর্তক উৎপত্তি উৎপত্তির স্থান ধর্মীয় গ্রন্থ ঈশ্বরের প্রকৃতি
ইহুদি Abraham ২০৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ মিশর-ইসরাইল তোরাহ একেশ্বরবাদী
হিন্দু একক প্রতিষ্ঠাতা নেই ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ভারত বেদ বহুশ্বেরবাদী
জরথুস্ত্র জরথ্রুস্ট ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ইরান Avesta একেশ্বরবাদী
জৈন বর্ধমান মহাবীর ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ভারত অদ্বৈতবাদী
কনফুসীয় কনফুসিয়াস ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ চীন Lun-yü অদ্বৈতবাদী
বৌদ্ধ গৌতম বুদ্ধ ৫৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ভারত ত্রিপিটক অদ্বৈতবাদী
তাওবাদ লাও জে ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ভারত Tao Te Ching সর্বেশ্বরবাদী
শিন্তো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ জাপান Kojiki বহুশ্বেরবাদী
খ্রিস্টান যীশু ২৭ খ্রিস্টাব্দ ইসরাইল-রোম নতুন টেস্টামেন্ট একেশ্বরবাদী
ইসলাম মুহাম্মাদ ৬১০ খ্রিস্টাব্দ আরব দেশ কোরআন একেশ্বরবাদী
শিখ গুরু নানক দেব ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দ ভারত গ্রন্থ সাহিব একেশ্বরবাদী
বাহাই বাহাউল্লাহ ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ ইরান একেশ্বরবাদী

উৎপত্তিকালের ওপর ভিত্তি করে ধর্মগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।
religions-era

  • Prehistoric – Animistic (প্রাগৈতিহাসিক কাল – সর্বপ্রাণবাদী ধর্ম): প্রাগৈতিহাসিক যুগে আদিম অরণ্যচারী মানুষ পশু শিকার করে এবং বন-জঙ্গল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে জীবন যাপন করত। ঝড়-বৃষ্টি, তুষারপাত, দাবানল, অন্ধকার, নদী, সাগর, জীব-জন্তু ইত্যাদির কাছে তখন মানুষ ছিল বড় অসহায়। এইসব প্রাকৃতিক কার্যবিধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় আদিম মানুষ এগুলোকে খুব ভয় পেত। তাই তারা মনে করত সবকিছু জীবন্ত এবং এদের রয়েছে অতি প্রাকৃত শক্তি বা আত্মা। এদের আত্মাকে খুশি রাখতে পারলে এরা মানুষের ক্ষতি করবে না – এ ধরনের অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক বিশ্বাস বিভিন্ন জনগোষ্টির মধ্যে প্রচলিত ছিল।
  • Ancient – Polytheistic (প্রাচীন কাল – বহুশ্বেরবাদী ধর্ম): এসময়ে বিভিন্ন জাতি ও উপজাতির ছিল নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস। এগুলো ছিল এলাকা ও জাতি ভিত্তিক। তাই এসব জাতির সাথে তাদের ধর্মবিশ্বাসও কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। যেমন মিশরীয়, গ্রীক, রোমান এবং প্রাচীন চীনা ধর্মসমূহ। এরা কাল্পনিক ভাবে অতি মানবীয় শক্তি-সামর্থ্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বিভিন্ন দেবতার অস্ত্বিত্বে বিশ্বাস করত। যেমন বিষ্ণু, কৃষ্ণ, জিউস, অ্যাপেলো ইত্যাদি। তখন এসব দেবতাদের নিয়ে চালু ছিল অনেক বীরগাঁথা, উপখ্যান ও রোমাঞ্চকর কাহিনী। দেবতাদের তুষ্ট করতে প্রার্থনা করার জন্য প্রথম উপসনাগৃহ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়েছিল।
  • Perennial – Archetypal (দীর্ঘস্থায়ী কাল – আদিরূপকীয় ধর্ম): এসময়ে ধর্মবিশ্বাসগুলো আধুনিক ধ্যান-ধারণায় বলিষ্ট ও পরিপক্ক হয়ে পূর্ণবিকশিত হতে শুরু করে এবং বিভিন্ন জাতি ও গোষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এসময়ের ধর্মগুলোতে কমবেশি মানুষের নৈতিক জীবনদর্শন, মানবতা, নীতিবাক্য ইত্যাদির সন্নিবেশ ছিল। তাছাড়া মৃত্যুর পরে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার ও মন্দ কাজের জন্য শাস্তির কথা উল্লেখ ছিল। এতদিন ধরে কিছু অলৌকিক বিশ্বাস ও দেব-দেবতাদের কাল্পনিক কাহিনীর ওপর যেসব ধর্ম প্রচলিত ছিল সেগুলোর পরিবর্তে এসব ক্লাসিক্যাল জীবনদর্শন ভিত্তিক ধর্মগুলো মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হল। উল্লেখ্য, সমসাময়িক কালে মানব জাতির প্রাচীন সভ্যতাগুলোরও (সুমেরীয়, সিন্ধু) উন্মেষ ঘটেছিল। সময়ের ধারায় একই ধর্মবিশ্বাস বিভিন্ন দেশ, জাতি ও গোষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাই একক কোন জাতি বা গোষ্টি কালের আবর্তে হারিয়ে গেলেও তাদের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়নি। এসময়ে (600 BCE – 500 BCE) মাত্র ১০০ বৎসরের ব্যবধানে অনকগুলো ধর্মের উত্থান হয়। যেমন: Zoroastrianism, Buddhism, Confucianism, Taoism, Judaism, and Jainism ই্ত্যাদি। তাই ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দকে অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হল।
    ধর্মীয় ইতিহাসের যুগসন্ধিকাল বলা হয়ে থাকে। এসব ধর্মগুলোর মধ্যে মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্যের মিলও ছিল। ইহুদি ধর্মের মূল মতবাদকে ভিত্তি করে পরবর্তীতে সংযোজন-বিযোজনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে সৃষ্টি হয় খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্ম।
  • Prolific – Alternatives (ভিন্নমতাবলম্বী কাল – বৈকল্পিক ধর্ম): এসময় আর কোনো বৃহৎ নতুন ধর্মের সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভুত উন্নত সাধনে ধর্মীয় অনেক ধ্যান-ধারণা ভুল বা অকার্যকর প্রমাণিত হয়। তাই একই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী হয়েও মত ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যে বিভিন্ন দল ও মতের সৃষ্টি হয়। যেমন: শিখ, বাহাই, জেহোভা, সেকুলারিসম ইত্যাদি

ঈশ্বরের প্রকৃতি ও অস্তিত্ত্ব
ঈশ্বরের প্রকৃতি ও অস্তিত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ধর্মকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ঈশ্বরবাদী ও অদ্বৈতবাদী।

ঈশ্বরবাদী: যে সব ধর্মে সরাসরি ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব স্বীকার করা হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে ঈশ্বরের অবস্থান এই বিশ্বব্রম্মান্ডের বাহিরে অন্য কোথাও।
ঈশ্বরবাদী ধর্মগুলো দুই ভাগে বিভক্ত: একেশ্বরবাদী ও বহুশ্বেরবাদী।

  1. জরথুস্ত্র ধর্ম – Zoroastrianism (700 BCE) পারস্যবাসীর অগ্নিউপসনামূলক ধর্ম – একেশ্বরবাদী
  2. ইহুদি ধর্ম – Judaism (600 BCE) – একেশ্বরবাদী
  3. খ্রিস্টধর্ম – Christianity (30 CE) – একেশ্বরবাদী
  4. ইসলাম ধর্ম – Islam (600 CE) – একেশ্বরবাদী
  5. হিন্দুধর্ম – Hinduism (1500 BCE) – বহুশ্বেরবাদী

অদ্বৈতবাদী: যে সব ধর্মে সরাসরি ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব স্বীকার করা হয় না এবং বিশ্বাস করা হয় যে ঈশ্বর হচ্ছে এক বিশেষ শক্তি যার অস্তিত্ত্বের বিভিন্ন রূপ এই বিশ্বব্রম্মান্ডে বিরাজমান।

  1. বৌদ্ধধর্ম – Buddhism (500 BCE
  2. তাওবাদ – Taoism (500 BCE)
  3. কনফুসীয়বাদ – Confucianism (500 BCE)

মৃত্যুর পরে
ধর্মের সাথে মানুষের মৃত্যু অতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ মানুষের মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরে কী হতে পারে – তা নিয়ে সংশয়, দ্বিধা, দ্বন্দ্বের কোন শেষ নেই। তাই প্রায় প্রতিটি ধর্মে এর একটি অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই ব্যখ্যার ওপর ভিত্তি করে ধর্মগুলোকে আবার চারভাগে ভাগ করা যায়।

  • (Judged) মৃত্যুর পর শেষ বিচারে বিশ্বাসী
  • (Rebirth) পূণঃজন্মে বিশ্বাসী
  • (Death) শেষ পরিণতি মৃত্যুতে বিশ্বাসী
  • (Revert) পূর্বাকারে ফিরে যাওয়ায় বিশাসী
ধর্ম অনুসারী উপসনালয় মৃত্যুর পরে চিহ্ন
খ্রিস্টান ২১০০ মিলিয়ন   গীর্জা Judged
ইসলাম ১৪০০ মিলিয়ন   মসজিদ Judged
হিন্দু ৯০০ মিলিয়ন   মন্দির Rebirth
বৌদ্ধ ৩৭৬ মিলিয়ন   মন্দির Rebirth
কনফুসীয় ১৫০ মিলিয়ন   Revert
শিখ ২৩ মিলিয়ন   গুরুদুয়ারা Judged
ইহুদি ১৪ মিলিয়ন   synagogue Judged
বাহাই ৭ মিলিয়ন   Bahá’í House Judged
জৈন ৪.২ মিলিয়ন   temple Revert
শিন্তো ৪ মিলিয়ন   Shrine Death

অনুসারীর ভিত্তিতে ধর্মগুলোর অনুক্রম

বিশ্বের প্রধান ধর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত ধারণা:

খ্রিস্ট ধর্ম :
খ্রিস্ট ধর্ম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এর গোড়াপত্তন হয় প্যালেষ্টাইনে ৩৩ খ্রিস্টাব্দে। এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা যীশু। খ্রিস্টানরা যীশুকে মসীহ মনে করেন এবং তাঁকে যীশু খ্রীস্ট বলে ডাকেন। জনসংখ্যার দিক দিয়ে (২১০ কোটি) এটি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম। খ্রিস্ট ধর্মের মূল গ্রন্থ নতুন টেস্টামেন্ট বা নতুন বাইবেল। এই ধর্মাবলম্বীরা খ্রিস্টান নামে পরিচিত। তারা বিশ্বাস করে যে যীশু খ্রীস্ট হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র। গীর্জায় ‘ফাদার’ বা ধর্ম গুরুর তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় প্রার্থনা করা হয়। ধর্মীয় মতবাদের কিছু পার্থক্যের ভিত্তিতে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত। যেমন: রোমান ক্যাথলিক চার্চ, প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ, অর্থোডক্স চার্চ, আসিরীয় চার্চ , মর্মন ও অন্যান্য খ্রিস্টীয় বিশ্বাস।

ইসলাম ধর্ম:
ইসলাম ধর্ম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এর গোড়াপত্তন আনুমানিক ৬২২ খ্রিস্টাব্দে। আরবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা মুহাম্মদ এই ধর্ম প্রচার করেন। কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। ধর্মগ্রন্থ কুরআন সৃষ্টকর্তা আল্লাহর বাণী এবং আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী এবং ইসলাম আব্রাহামীয় শেষ ধর্ম। তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তি হাদিস নামে পরিচিত। ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও আব্রাহামীয়। জনসংখ্যার দিক দিয়ে (১৪০ কোটি) এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। নবী মুহাম্মদ ও তাঁর উত্তরসূরীদের প্রচার ও ধারাবাহিক যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মীয় মতানৈক্যের ভিত্তিতে ইসলামের অনুসারিরা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত: সুন্নি ইসলাম (১২৫ কোটি) ও শিয়া ইসলাম (১৭ কোটি)।

হিন্দু ধর্ম:
হিন্দু ধর্ম বিশ্বের প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে একটি। এর গোড়াপত্তন আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতকে। ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক স্থানীয় ধর্মীয় ঐতিহ্য একত্রে হিন্দুধর্ম নামে পরিচিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। বিভিন্ন দেব-দেবীতে বিশ্বাস থাকলেও মূলত একেশ্বরবাদী (ব্রক্ষ্মা) ধর্ম। লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের “প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস” বলা হয়। ‘Indus’ বা সিন্ধু শব্দ থেকে ফারসি ‘হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে (৯০ কোটি) এটি বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম ধর্ম। মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ, উপনিষদ্, ভগবদ গীতা সংস্কৃত ভাষায় রচিত। ধর্মীয় প্রার্থনা হিসাবে মন্দিরে গুরু বা ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে পুজা বিভিন্ন দেব-দেবীর পুজা করা হয়। ধর্মীয় আচার-আচরণের পার্থক্যে বৈষ্ণব – ৫৮ কোটি, শৈব – ২২ কোটি। শাক্ত/স্মার্ত/আর্য সমাজ ও অন্যান্য হিন্দু বিশ্বাস – ১৫ কোটি।

বৌদ্ধধর্ম:
বৌদ্ধ ধর্ম গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে (৩৮ কোটি) এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম।

কনফুসীয় ধর্ম:
কনফুসীয় ধর্ম বিখ্যাত চৈনিক সাধু কনফুসিয়াসের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। কনফুসিয়াস ৫৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের শানতুং প্রদেশে জন্মগ্রহন করেন। এটি মূলত একটি নৈতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থা যা কনফুসিয়াসের দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠাতা। কনফুসিয় ধর্মের মূলকথা হচ্ছে মানবতাবাদ।

শিখধর্ম:
শিখধর্ম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে এই ধর্ম প্রবর্তিত হয়। এই ধর্মের মূল ভিত্তি গুরু নানক দেব ও তাঁর উত্তরসূরি দশ জন শিখ গুরুর ধর্মোপদেশ। শিখধর্ম বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী। শিখ ধর্মমত ও দর্শন মূলত ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের আংশিক সংমিশ্রণ। এদের উপসনালয়ের নাম গুরুদুয়ারা ও ধর্মগ্রন্থের নাম গ্রন্থ সাহিব।

ইহুদি ধর্ম:
একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্ম বিশ্বের প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে একটি। একে সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এর গোড়াপত্তন আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকে। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ মনে করেন যে, ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম। তাই এগুলোকে একত্রে ইব্রাহিমীয় ধর্ম বলা হয়। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্ট যাকে “তোরাহ”ও (Torah) বলা হয়ে থাকে। এই ধর্মের প্রবর্তক মোসেয হলেন ঈশ্বরের একজন বাণীবাহক। অনুসারির সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ।

জৈন ধর্ম:
জৈনধর্ম প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত একটি ধর্মমত বা ঈশ্বরহীন দর্শন। জৈন ধর্মে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই। তারা আত্মাতত্ত্বে বিশ্বাসী। মানুষের আত্মা দেহের উপর ভর করে মুক্তির পথে পরিভ্রমণরত। সংখ্যায় কম হলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধর্মমতাবলম্বীদের দেখা যায়। জৈনধর্মের মূল বক্তব্য হল সকল জীবের প্রতি শান্তি ও অহিংসার পথ গ্রহণ। এই ধর্ম মতে, নির্বাণ বা মোক্ষলাভ মানব জীবনের পরম লক্ষ্য। এর সাথে বৌদ্ধ ধর্মের কিছুটা মিল রয়েছে। যে ব্যক্তি বা আত্মা অন্তরের শত্রুকে জয় করে সর্বোচ্চ অবস্থা প্রাপ্ত হন তাঁকে জিন (জিতেন্দ্রিয়) আখ্যা দেওয়া হয়। এই ‘জিন’ শব্দ থেকে ‘জৈন’ শব্দের উৎপত্তি। বর্ধমান মহাবীরের মৃত্যুর বেশ কিছুকাল পর জৈনদের মধ্যে বিভাজন হয় এবং দুটি মতের সৃষ্টি হয়।
১. দিগম্বর- যারা সম্পূর্ণ নিরাভরন থাকায় বিশ্বাসী
২. শ্বেতাম্বর- যারা অল্প বস্ত্র পরিধানে বিশ্বাসী।
আচারগতভাবে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তারা জৈন দর্শনের মূল বিষয়ে (মহাব্রত) একমত। যেমন: অহিংসা, সুনৃত (সত্য), মূলত (অচৌর্য), ব্রহ্মচর্য, অপরিগ্রহ ইত্যাদি।

comparison

সূত্র: ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া, পত্রপত্রিকা

বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি, বিস্তার ও বৈশিষ্ট্য” তে 9টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।